Monday, July 29, 2019

পৃথিবীর সর্বপ্রথম ডেঙ্গু প্রতিষেধক অনুমোদন করলো WHO

ডেঙ্গুজ্বর প্রাণঘাতী মশকিবাহিত রোগ যা পৃথিবীর অর্ধেকসংখ্যক জনসংখ্যাকে সংক্রমিত করতে সক্ষম।
গত ১৫ই এপ্রিল, WHO (World Health Organization) কর্তৃক পৃথিবীর সর্বপ্রথম ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিষেধক অফিসিয়ালি অনুমোদিত হয়।
ডেঙ্গুজ্বরের কোন চিকিৎসা নেই। এর ফলে প্রচন্ড মাথাব্যথা (সাধারণতঃ দু’চোখের মাঝে), মাংসপেশি ও জয়েন্টে ব্যথা, র‍্যাশ , রক্তপাত এবং এমনকি মৃত্যুও ঘটে। ডেঙ্গু ভাইরাস ১০ দিন পর্যন্ত জীবিত থাকতে পারে। প্রতি বছরে, ১২০টির মতন দেশে (বিশেষত সাউথইস্ট এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা এবং আফ্রিকা) প্রায় ৩৯০ মিলিয়ন মানুষ ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে।
Dengvaxia নামে পরিচিত এই ভ্যাক্সিনটি প্রায় ২০ বছরের রিসার্চের ( French-based Sanofi Pasteur) ফসল। চারটি দেশ- মেক্সিকো, ব্রাজিল, এল সালভাদোর এবং ফিলিপাইন এ ইতোমধ্যে ভ্যাক্সিনটি ব্যাবহারের লাইন্সেন্স দেওয়া হয়েছে। গত শুক্রবারের অফিশিয়াল অ্যানাউন্সমেন্টের পর উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও ভ্যাক্সিনটি ব্যাবহার করা হবে।
Dengue Vaccine Initiative এর পরিচালক Dr. In-Kyu Yoon বলেন, “যেসব দেশগুলোতে ডেঙ্গুর আঞ্চলিক বিস্তার রয়েছে, সেই দেশগুলোর জন্য ডেঙ্গু মারাত্মক হুমকিস্বরূপ এবং খুব দ্রুত তা সমগ্র দেশব্যাপি বিস্তার ঘটাবে” (In countries where dengue is endemic, it’s one of the most feared diseases. The trajectory globally is increasing—at this point it’s essentially a pandemic. )
ভ্যাক্সিনটি এক বছরে সুনির্দিষ্ট সময় ব্যাবধানে তিনটি ইনজেকশনে করে দেওয়া হয়।
Clinical research and development (Sanofi’s division, Thailand) এর সহকারী উপরাষ্ট্রপতি Dr. Alain Bouckanooge  এর মতে, এই ভ্যাক্সিনটি বানানো হয়েছে, ৯ বছরের বেশী বয়সীদের জন্যে যারা আগেও এই ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত হয়েছেন অথবা এন্ডেমিক এলাকাগুলোতে বসবাস করছেন। বিগত কয়েক বছরের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গেছে যে, ভ্যাক্সিনটি সাউথইস্ট এশিয়া এবং ল্যাটিন আমেরিকাতে পূর্বে ডেঙ্গুজ্বরে সংক্রামিতদের উপর ৭০% এবং হস্পিটালাইজডদের উপর ৯০-৯৫% কার্যকর।
ডেঙ্গু ভাইরাসটি খুবই জটিল হবার কারনে সাইনটিষ্টদের এত সময় লেগেছে এটাকে উন্নত করতে। পোলিও এবং স্মলপক্সের মতন মারাত্মক রোগের থেকেও এর প্রজাতির সংখ্যা বেশি(৪টা)। যদি একটির বেশী প্রজাতি দ্বারা কোন মানুষ আক্রান্ত হয় তবে তার হস্পিটালাইজড অথবা মৃত্যুর আশংকা বেড়ে যায়।
Yoon এর মতে, “একটি সফল ভ্যাক্সিন হলেও রাতারাতি ডেঙ্গুকে দূর করা সম্ভব না। Sanofi’র প্রোডাক্ট উৎপাদনেও সীমাবদ্ধতা আছে। কোম্পানি পাঁচ বছরে প্রায় ১ বিলিয়ন চাহিদার প্রেক্ষিতে, প্রায় ১০০ মিলিয়নের মত ভ্যাক্সিন বানাতে সক্ষম। তাই এখানে উৎপাদন এবং সাপ্লাই এর কিছু ব্যাপার রয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে যে আমাদের একটার বেশী ভ্যাক্সিন এবং আরো ম্যানুফেকচারিং কোম্পানি প্রয়োজন”।
Dengvaxia’র কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে- মাথাব্যাথা, ক্লান্ত হয়ে পরা এবং অল্পমাত্রায় জ্বর।
ভ্যাক্সিনটি বাস্তবায়ন নির্ভর করছে স্বতন্ত্র সরকারের উপর। WHO বিভিন্ন দেশে ভ্যাক্সিনেশন প্রোগ্রামের কথা বলেছে এবং WHO’র Initiative for Vaccine Research এর সিনিওর অ্যাডভাইসর Joachim Hombach বলেছেন, “অবশ্যই ভ্যাক্সিনটি কিনতে হবে এবং এর দামও অনেক। কোম্পানির সাথে কমিটমেন্টে যেতে হবে, মাঝপথে টাকা নেই বলে সরে আসা যাবেনা”। (Source- Times)

See these links below:

1) Dengue Vaccine: Relief turns into worry - The Daily Star




Monday, June 24, 2019

সুগন্ধি: এ বিষয়ে রাছুল (সাঃ) -এর সুন্নাহ, বিধিনিষেধ এবং প্রশ্ন-উত্তর


সুগন্ধির প্রতি প্রিয় নবীর অনুরাগ

মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ

সুগন্ধির প্রতি প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রচণ্ড অনুরাগ ছিল। মহানবী (সা.) নিজেও ছিলেন সুগন্ধির আকর। তিনি রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে সুগন্ধির ঝরনা বয়ে যেত। লোকেরা বুঝতে পারত, নবী করিম (সা.) এ রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেছেন। পাশাপাশি সুগন্ধি ও আতর রাসুল (সা.)-এর অত্যন্ত প্রিয় ছিল। সুগন্ধিপ্রিয়তা নবী-রাসুলদের আদর্শ। হজরত আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘চারটি বস্তু সব নবীর সুন্নত—আতর, বিয়ে, মেসওয়াক ও লজ্জাস্থান ঢেকে রাখা। ’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২২৪৭৮)
মহানবী (সা.) সুগন্ধির প্রতি খুবই অনুরাগী ছিলেন। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের দুনিয়া থেকে আমার কাছে তিনটি জিনিস অধিক প্রিয়। নারী, সুগন্ধি, আর আমার চক্ষু শীতল হয় নামাজের মাধ্যমে। ’ (নাসায়ি শরিফ, হাদিস : ৩৯৩৯)
সুগন্ধ ফুলের নির্যাস, মৃগনাভি ইত্যাদির সুরভিত তেল দিয়ে আতর তৈরি করা হয়। মেশক, আম্বরও উত্তম সুগন্ধি। মহানবী (সা.) মেশক খুব পছন্দ করতেন। হরিণের নাভি থেকে এটা তৈরি করা হয়। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘উত্তম সুগন্ধি হলো মেশক। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ৯১২)
মেশক, চন্দন ও জাফরানের সুগন্ধি রাসুলুল্লাহ (সা.) ব্যবহার করেছেন। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, মহানবী (সা.) বৈচিত্র্যময় সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। আল্লামা ইবনে আবদুল বার (রহ.) ‘তামহিদ’ নামক কিতাবে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.)-এর একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) জাফরানের সুগন্ধি ব্যবহার করেছেন। ’
‘আল-কামেল’ নামক গ্রন্থে হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রিয় সুগন্ধি ছিল মেশক ও চন্দন। ’ মেশক ব্যবহারের হাদিস আয়েশা (রা.) থেকে মুসলিম শরিফেও বর্ণিত হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) সাধ্যমতো অন্য লোকদেরও সুগন্ধি ব্যবহারের আদেশ দিয়েছেন। বিশেষ করে লোকসমাগমে গেলে, জুমার দিন, ঈদের দিন সুগন্ধি ব্যবহারের বিশেষ তাগিদ রয়েছে। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘জুমার দিন যথাসম্ভব তোমরা সুগন্ধি ব্যবহার করো। ’ (নাসায়ি শরিফ, হাদিস : ১৩৫৮)
রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে কেউ সুগন্ধিযুক্ত কোনো বস্তু হাদিয়া দিলে তিনি তা ফেরত দিতেন না। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো সুগন্ধি-আতর ফেরত দিতেন না। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৭১৩)
ব্যক্তিগতভাবে হজরত আয়েশা (রা.)-এর কাছে যেসব সুগন্ধি থাকত, তার থেকে উত্তম সুগন্ধি হজরত আয়েশা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে লাগিয়ে দিতেন। (নাসায়ি শরিফ, হাদিস : ২৬৪১)
হজরত আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, রাসুলুল্লাহ (সা.) কী ধরনের সুগন্ধি ব্যবহার করতেন, জবাবে তিনি বলেছেন, ‘মেশক ও আম্বরের সুগন্ধি রাসুলুল্লাহ (সা.) ব্যবহার করতেন। ’ (নাসায়ি শরিফ, হাদিস : ৫০২৭)
স্মরণ রাখতে হবে, মহানবী (সা.) পুরুষ ও নারীদের সুগন্ধির মধ্যে পার্থক্য করেছেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘পুরুষ এমন সুগন্ধি ব্যবহার করবে, যার মধ্যে সুবাস থাকবে। কিন্তু কোনো রং থাকবে না। আর নারী এমন সুগন্ধি ব্যবহার করবে, যার মধ্যে রং থাকবে, কিন্তু সুবাস থাকবে না। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৭১১) তবে নারীদের জন্য ঘরের মধ্যে যেকোনো ধরনের সুগন্ধি ব্যবহার করা বৈধ।
লেখক : শিক্ষক, মাদ্রাসাতুল মদিনা, নবাবপুর, ঢাকা

সুগন্ধি ব্যবহারে ইসলামের বিধান ও গুরুত্ব


সুগন্ধি ও আতর রাসুলুল্লাহ (সা.) এর অত্যন্ত প্রিয় ছিল। যেকোনো উৎসব, ঈদ ও জামাআ’র দিন তিনি সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। সুগন্ধিপ্রেম থাকা নবী-রাসুলদের আদর্শ। হজরত আনাস (রা.)-এর অন্য বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমার পৃথিবীর সুগন্ধি আমার কাছে প্রিয় করা হয়েছে এবং নামাজের ভেতর আমার চোখের শীতলতা রাখা হয়েছে। (নাসাঈ, হাদিস নং :  ৩৯৩৯)
অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) কে কেউ সুগন্ধি উপহার দিলে তিনি গ্রহণ করতেন। ফিরিয়ে দিতেন না। কেউ সুগন্ধি দিলে ফিরিয়ে দিতেও তিনি নিষেধ করেছেন। (বুখারি, হাদিস নং : ৫৫৮৫)
তবে বর্তমানে সুগন্ধিযুক্ত বস্তু যেমন—সেন্ট, বডি স্প্রে ইত্যাদি অ্যালকোহল ছাড়া প্রস্তুত করা দুষ্কর। আর এ বিষয়ে ইসলামের বিধান হলো, যেসব অ্যালকোহল আঙুর, খেজুর অথবা কিশমিশ থেকে তৈরি, সেসব অ্যালকোহল সম্পূর্ণ হারাম। এ ধরনের অ্যালকোহল মেশানো সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে না। কেননা মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘নেশা সৃষ্টিকারী প্রতিটি বস্তুই হারাম।’ (বুখারি, হাদিস নং : ৪৩৪৩)
এই তিন বস্তু ছাড়া অন্য উপাদান থেকে যেসব অ্যালকোহল তৈরি করা হয়, যেমন—এখনকার সেন্ট বা বডি স্প্রেগুলোতে সাধারণত আঙুর, খেজুর বা কিশমিশ থেকে প্রস্তুতকৃত অ্যালকোহল থাকে না; বরং বিভিন্ন শস্যদানা, গাছপালার ছাল, মধু, শস্য, যব, আনারসের রস, গন্ধক ও সালফেট, অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান ইত্যাদি থেকে প্রস্তুতকৃত অ্যালকোহল মেশানো হয়। (এনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রিটানিকা : খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৫৪৪, প্রকাশকাল ১৯৫০ খ্রি.) তাই এগুলো নাপাক নয়। আর এগুলো নেশার উদ্রেক না হওয়া পরিমাণ ব্যবহার করা যায়। (তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম : ১/৩৪৮, ৩/৩৩৭; ফিকহুল বুয়ু : ১/২৯৮)
সুতরাং যেহেতু সেন্ট বা বডি স্প্রেগুলোতে সামান্য পরিমাণ পরিশোধিত অ্যালকোহল ব্যবহার করা হয় এবং তা শরীরের অভ্যন্তরে কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না, তাই এগুলো ব্যবহারে আপত্তি নেই। তবে এরূপ সেন্ট পরিত্যাগ করাই উত্তম। (জাদিদ ফিকহি মাসাইল : ১/৩৮)

প্রশ্ন : পারফিউম, বডি স্প্রে বা ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করলে কি নামাজ হবে?
উত্তর : পারফিউম, বডি স্প্রে বা ডিওডোরেন্ট ইত্যাদিতে যদি অ্যালকোহলের মাত্রা সামান্য পরিমাণে থাকে যে এর তেমন কোনো অস্তিত্ব বোঝা যায় না বা অ্যালকোহলের মাত্রা ১ শতাংশ বা ২  শতাংশ, তাহলে সেটি ব্যবহার করা নাজায়েজ নয়, নামাজ হয়ে যাবে।
কিন্তু এটি নির্ভর করছে অ্যালকোহলের মাত্রা কোন পর্যায়ে রয়েছে, তার ওপর। বডি স্প্রে তো অ্যালকোহল নয়, এর লক্ষ্য হলো দুর্গন্ধ থেকে মুক্ত রাখা। একজন ওলামায়ে কেরাম তাঁর ফতোয়ার মধ্যে বলেছেন, কোনো জিনিস যে উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়ে থাকে এবং সেই উপাদানের মধ্যে যদি ভিন্ন জিনিসও থাকে এবং সেটি যদি উপাদানের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন কিছুই না হয়, তাহলে ওই জিনিস ব্যবহার করতে ইসলামী শরিয়ার মধ্যে কোনো বাধা নেই, এটি জায়েজ রয়েছে।
যেমন—সাবান। এহরাম অবস্থায় সুগন্ধি ব্যবহার করা নিষেধ। কিন্তু সাবান ব্যবহার করছেন, সাবানের মধ্যে ১ শতাংশ সুগন্ধি রয়েছে। শেখ রহমাতুল্লাহ আলাই বলেছেন, এটি ব্যবহার করা জায়েজ। কারণ আপনি তো সুগন্ধি ব্যবহার করছেন না, আপনি ব্যবহার করছেন সাবান। আপনার লক্ষ্য ভিন্ন।
এটি খুবই সূক্ষ এবং গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা। আপনি যে বডি স্প্রে ব্যবহার করছেন, এটি শুধু সুগন্ধির জন্য, আপনি কিন্তু অ্যালকোহল ব্যবহার করছেন না।
সুতরাং এটি ব্যবহার করা নাজায়েজ হবে না, বরং জায়েজ হবে। তবে মাত্রা যদি অনেক বেশি হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে একটি মাসআলা হতে পারে। কিন্তু এমনটি মনে হয় কোথাও আমরা দেখিনি।
মৌলানা ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ
Source: www.ntvbd.com

মুসলমানদের পোশাক প্রসঙ্গে



মুসলমানদের পোশাক প্রসঙ্গে

                      - ইবনে সাঈদ উদ্দীন


               প্রত্যেক রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিভাগে পৃথক পোশাক ব্যবস্থা থাকে। তাই কোনো দেশের পতাকাকে অসম্মান করা যায় না। মোটকথা বিভিন্ন সংস্থা ও সরকারের এই যে পৃথক পোশাক থাকে তা ব্যতীত পরস্পরের মধ্যে পার্থক্য করা সম্ভব নয়। কে বুঝবে লোকটি পুলিশ, না ডাক বিভাগের, না সেনাবাহিনীর সদস্য। তাই যুগ যুগ ধরে প্রত্যেক দেশে পৃথক পৃথক পোশাকের ব্যবস্থা চলে আসছে। তেমনি আছে প্রত্যেক জাতির আলাদা পোশাক যে জাতি নিজস্ব পতাকা ও বৈশিষ্ট্যের হেফাজত করে না, সে জাতি দ্রুত অন্যজাতির মধ্যে বিলীন হয়ে যায়। এমনকি তাদের নাম-নিশানাও বাকি থাকে না। শিখ জাতি নিজেদের বৈশিষ্ট্যমন্ডিত পাগড়ি, চুল ও দাড়ি হেফাজত করে, সে কারণে শিখ জাতি এক পৃথক বৈশিষ্ট্যের দাবিদার এবং জিন্দা জাতি হিসেবে গণ্য।
              ইংরেজি জাতি ষোল শতাব্দীর শেষ দিকে এদেশে আসে। তারা ছিল শীত প্রধান দেশের অধিবাসী। কিন্তু গরম দেশে এসে নিজস্ব পোশাক কোট, প্যান্ট, হ্যাট ও নেকটাই ত্যাগ করেনি। সে কারণে তৎকালীন ৫ কোটি মানুষের ভারতে তারা বিলীন হয়ে যায়নি।
                      মুসলমান এদেশে এসেছে এক হাজার বছর পূর্বে। যদি তারা নিজস্ব পোশাক হেফাজত না করতো তাহলে অন্য জাতির মতো তারাও সেই কবেই হিন্দুদের মধ্যে বিলীন হয়ে যেতো। মুসলমানরা শুধু নিজস্ব পোশাক রক্ষা করেনি বরং নিজেদের ধর্ম, তাহজীব-তমদ্দুন, ভাষা ও আচার-ব্যবহার প্রভৃতির হেফাজতও করেছে। সে কারণে আজও ভারতের বুকে নিজেদের সত্তাকে টিকিয়ে রেখেছে। যতোদিন তারা এ ধারা অব্যাহত রাখবে ততোদিন জাতি হিসেবে বেঁচে থাকতে পারবে। নতুবা কালের স্রোতে তলিয়ে যাবে। কোনো জাতি বা ধর্মের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব ততোদিন দুনিয়ার বুকে বিরাজমান থাকে যতোদিন সে আচার-আচরণ, কৃষ্টি ও সভ্যতা এবং ভাষা ও কর্মনীতিতে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বজায় রাখতে পারে।
                       ইসলাম নিজের আকীদা-বিশ্বাস, ধ্যান-ধারণা এবং আদর্শ ও চরিত্রের দিক দিয়ে অপরাপর ধর্ম হতে অনন্য বৈশিষ্ট্যের দাবিদার এবং বাস্তবেও ইসলাম আপন অনুসারীদের জন্য পৃথক পোশাক নির্দিষ্ট করে এবং যে কোনো মূল্যে তার হেফাজতকে ধর্ম ও জাতির কর্তব্যরূপে গণ্য করে। কারণ এই পোশাক দ্বারাই খোদা ভক্তদের পার্থক্য করা যাবে। হাদীস শরীফে আছে, ‘যে লোক যে জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে।' এর মর্মকথাও তাই। এ কারণে হুজুর (সা.) নিজে উম্মতের জন্য বিশেষ পোশাক নির্দিষ্ট করেছেন। কোথাও বলেছেন, আমাদের এবং মুশরিকদের মধ্যকার পার্থক্য হলো টুপির ওপর পাগড়ি পরা। আবার কোথাও বলেছেন, আমাদের এবং মুশরিকদের মধ্যে পার্থক্য এই যে, আমরা দাড়ি বড় করে রাখি আর তারা মুন্ডায় বা ছোট রাখে। আবার কোথাও বলেছেন, ইহুদি-খৃস্টানদের মতো চুলের সিঁথি কেটো না। এভাবে তিনি টাখনুর নিচে কাপড় পরতেও নিষেধ করেছেন যেন অহংকারীদের সাদৃশ্য না আসে। মোটকথা এসব বৈশিষ্ট্য ও পোশাক হলো ইসলামের একনিষ্ঠ অনুসারী আল্লাহর মকবুল বান্দাদের। বিপরীত দিকে আছে খোদাদ্রোহী ও ভিন্ন জাতিসমূহের পোশাক। কাজেই রাসূল (সা.)-এর আশেকগণের উচিত তারই চালচলন, আচার-আচরণ সুরত সিরাতের অনুসরণ করা এবং দ্বীন ও নবী (সা.)-এর শত্রুদের আচার-আচরণকে ঘৃণার সাথে পরিত্যাগ করা।
প্রত্যেক দেশ ও জাতি বন্ধুর রীতিনীতিকেই ভালবাসে এবং শত্রুর রীতিনীতিকে ঘৃণা করে। এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং মুসলিম জাতির জন্য বৃটিশ, আমেরিকা ও ফ্রান্সের পরিবর্তে নবী (সা.)-এর অনুসরণ করাই আবশ্যক। বলাবাহুল্য, পরীক্ষা, প্রতিযোগিতা, চাকরি-বাকরি এবং অফিসারের বিদ্রুপের বাহানা হলো তুচ্ছ ব্যাপার। শিখ জাতি পরীক্ষা ও প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয় এবং বড় বড় পদেও নিযুক্ত হয়। কিন্তু নিজের পাগড়ি ও দাড়ি ঠিক রাখে। কেউ বাঁকা চোখে দেখতে সাহস পায় না। তাহলে মুসলমান কি শিখ জাতির চেয়ে কোনো দিক দিয়ে দুর্বল/ কারণ মুসলমান সর্বদা নাফস ও শয়তানের বিরুদ্ধে মুজাহাদা (সংগ্রাম) করে দ্বীনের ওপর কায়েম (প্রতিষ্ঠিত) থাকে। সুতরাং সকল প্রতিকূলতার মধ্যে মুসলমান মাথা উঁচু করে ইসলামী বৈশিষ্ট্যের ওপর কায়েম থাকবে।
                     মাওলানা আশেক ইলাহী মিরাঠী (রহ.) চিকিৎসা শাস্ত্রের আলোকে দাড়ির গুণাগুণ সম্পর্কে বলেছেন, ইউনানী শাস্ত্রমতে দাড়ি হলো পুরুষের সৌন্দর্যের প্রতীক এবং বক্ষদেশের হেফাজতকারী। আধুনিক চিকিৎমা বিজ্ঞানেও দাড়ির সমর্থন পাওয়া যায়। জনৈক অভিজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, দাড়ির ওপর বারবার ক্ষুর চালালে স্নায়ুসমূহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে চোখের জ্যোতি হ্রাস পেতে থাকে। অপর ডাক্তার লেখেন যে, লম্বা দাড়ি রোগ জীবাণুকে গলা ও বক্ষ পর্যন্ত পৌঁছতে বাধা দেয়। দাড়ি সম্পর্কে মার্কিন খ্যাতনামা চিকিৎসক চার্ল হোমরের একটি লেখা খুবই স্পষ্ট। নিচে তার অনুবাদ দেয়া হলো :
                         জনৈক লেখক বলেন, ‘দাড়ি মুন্ডানোর বৈদ্যুতিক যন্ত্র প্রস্তুত করার জন্য জোর দেয়া হচ্ছে, যাতে কাজটি তড়িত গতিতে সম্পন্ন হয় এবং সময় বাঁচে।' আমি বুঝি না দাড়ির প্রশ্নে মানুষের এত আপত্তি কেন? মাথায় যদি চুল রাখা যায় তবে মুখে দাড়ি রাখতে অসুবিধা কোথায়? মাথার কোনো স্থানে চুল না উঠরে টাক খাওয়ার লজ্জা হয়, কিন্তু চেহারাকে টাক খাওয়ার মতো করতে লজ্জা হয় না কেন? অথচ ঐ দাড়ি পৌরুষের আলামত। দাড়ি মানুষের চেহারাকে পৌরুষদীপ্ত, প্রত্যয়ী ও দৃঢ় মনোবলসম্পন্ন করে। দাড়ির কারণে ক্ষতিকর ধুলাবালি ও রোগ জীবাণু হতে বেঁচে থাকা যায়। এছাড়া ঘন দাড়ি গলাকে সদা কাশি হতে বাঁচায়। ডা. হোমর দাড়ি মুন্ডানোকে চেহারার টাক, ফ্যাশনের গোলামী ও নারীসুলভ আচরণ বলে অভিহিত করেছেন। তার মতে, দাড়ি হলো সাহস, দৃঢ়তা, প্রত্যয় ও পৌরুষের প্রতীক। তিনি দাড়ি মুন্ডানোকে সর্দি-কাশির অন্যতম কারণ বলেও মন্তব্য করেন। ডা. হোমর আরো বলেন, দুনিয়াতে দাড়ির মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। ফলে প্রকৃতির অন্যতম অবদান হিসেবে নারীর ওপর পুরুষের যে প্রাধান্য তা ফিরে আসবে। কোনো দাড়িওয়ালা ব্যক্তি আপন স্ত্রীকে ত্যাগ করেনি। সে সদা নিজ দাড়ির মর্যাদা রক্ষা করে চলে। আমার বুঝে আসে না যে, প্রাপ্তবয়স্ক যুবকরা কিশোর হতে কেন চায়? আল্লাহ পুরুষের মুখে দাড়ি সৃষ্টি করেছেন, যাতে তার চেহারার সৌন্দর্য বাড়ে। যারা দাড়ি নিয়ে বিদ্রুপ করে তারা হযরত ঈসা (আ.)কেই বিদ্রুপ করে। কারণ তিনি দাড়ি রেখেছিলেন। চিন্তা করার বিষয় যে, একজন খৃস্টান নিজের ধর্ম ও চিকিৎসা শাস্ত্রের দৃষ্টিকোণ থেকে সংক্ষেপে কত মূল্যবান উক্তি করেছেন। তার মতে, যুবকের কিশোর অবস্থায় প্রত্যাবর্তনের আশা করা পশ্চাদমুখী হওয়ারই নামান্তর এটা যেন মানুষের বানরে পরিণত হওয়ার কুপবৃত্তি। একজন খৃস্টান দাড়ির বিদ্রুফকারীকে হযরত ঈসা (আ.)-এর সাথে বিদ্রুপকারী হিসেবে অভিহিত করেন। আর আমরা মুসলমানরা হুজুরে পাক (সা.)-এর উম্মত হয়ে তার পবিত্র আদর্শের কি মূল্য দিচ্ছি? স্বয়ং ঈসা (আ.) যার উম্মতরূপে কেয়ামতের আগে দুনিয়ায় পুনঃআগমন করবেন।

ইসলামে পোশাকের বর্ণনা

পোশাক ব্যবহারের উদ্দেশ্য বিশ্লেষণ করলে নিচের কারণগুলো আমাদের সামনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

১. প্রতিকূল আবহাওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করা:আবহাওয়ার প্রতিকূলতায় প্রকৃতি বিশ্বব্যাপী এক নয়। গরম দেশের পোশাক আর শীতপ্রধান দেশের পোশাক যে এক হবে না তা ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না। তাই প্রাথমিকভাবে মানুষ তার পরিবেশ অনুসারে পোশাক বেছে নেয়।

২. লজ্জাস্থানকে ঢাকা:লজ্জাস্থানের পরিমাণ বোধ ভিন্ন হতে পারে; কিন্তু লজ্জাস্থানকে আবৃত করা মানুষের একটি সহজাত প্রবৃত্তি।

৩. নিজেকে বা শ্রেণীকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করা:সভ্যতার একটি অবদান হলো ইউনিফর্ম। ইউনিফর্ম হিসেবে পোশাক ব্যবহার করে বিভিন্ন শ্রেণীর অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা এবং সমতা বিধান করাসহ উক্ত গোষ্ঠী বা শ্রেণীকে অন্য গোষ্ঠী বা শ্রেণী থেকে পৃথকভাবে চিহ্নিত করা হয়।

৪. সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা: বেশভূষা মানুষের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। সমাজজীবনকে করে সুশৃঙ্খল।

পোশাক ব্যবহারের উদ্দেশ্য সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের বর্ণনা।

এবং তিনি তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেছেন পরিধেয় বস্ত্রের, যা তোমাদের তাপ থেকে রক্ষা করে। (নাহল:৮১) হে আদাম সন্তানগণ, আমি তোমাদের পোশাক-পরিচ্ছদ দিয়েছি লজ্জাস্থান ঢাকার ও বেশভূষার জন্য। (আ’রাফ:২৬)

আমাদের পর্যবেক্ষণ এবং আল-কোরআনে বর্ণিত উদ্দেশের মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। প্রতিকূল আবহাওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করার কথা বলে স্বয়ং আল্লাহপাক ভৌগোলিক কারণে বিশ্বব্যাপী পোশাকের বিভিন্নতার স্বীকৃতি দিয়েছেন। ভৌগোলিক কারণেই বিশ্বব্যাপী পোশাকের একই ডিজাইন নির্ধারণ করা বিজ্ঞানসম্মত নয়। বিজ্ঞানের আধার মহান আল্লাহপাক কোরআনে তা নির্দেশও করেননি।

দীনের ক্ষেত্রে ইসলাম প্রতিটি বিন্দুতে অনঢ় হলেও শরিয়তি বিধানের ক্ষেত্রে ইসলাম সেভাবে অনঢ় না হয়ে সীমানা নির্ধারণ করেছে। তবে সীমানার ক্ষেত্রে অনঢ়। যেহেতু হজরত মুহাম্মদ (স.) শেষ নবী, তাই ইসলাম অনাগত ভবিষ্যতের সবদিক খোলা রেখে শুধু জীবনের বিভিন্ন ব্যবহারিক দিকের চুতসীমা নির্ধারণ করেছে। সীমার ভেতর মুমিনের আছে স্বাধীনতা। ইজতিহাদ করার অধিকারও এই সীমার মধ্যে।

পোশাকের কোরআনিক মৌলিক বিধান

১. লজ্জাস্থান তথা সতর আবৃতকারী পোশাক হতে হবে। (মুমিনদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থানসমূহ হেফাজত করে। -নূর :৩০)

২. পোশাক অপচয় ও অহমিকাপূর্ণ হবে না। (হে আদম সন্তান! প্রত্যেকটি ইবাদতের স্থানে তোমরা নিজেদের ভূষণে সজ্জিত হয়ে থাক। আর খাও, পান কর এবং অপচয় করো না।- আ’রাফ:৩১)

৩. মহিলাদের পোশাকে মাথা, বক্ষ এবং গ্রীবা আবৃতকারী কাপড় থাকতে হবে। (মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং লজ্জাস্থানকে হেফাজত করে, তারা যেন যা স্বভাবতই প্রকাশিত তা ব্যতীত সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে। তাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশ যেন তারা মাথার কাপড় দিয়ে আবৃত করে।-নূর:৩১)

কোরআনিক বিধানের পর আমরা পাই রাসুল (স.) সুন্নাহ থেকে পোশাকের ব্যবহারিক সীমা। অনেকে মনে করেন রাসুলের (স.) পোশাক ছিল ৬ষ্ঠ শতাব্দীর আরবের প্রচলিত পোশাক। প্রকৃত ঘটনা তা নয়। রাসুলের (স.) পোশাক এক ছিল না। রাসুলুল্লাহর (স.) পোশাক ছিল এক আল্লাহতে বিশ্বাসী তাকওয়ার পোশাক; কিন্তু একই আবহাওয়া ও দেশে বাস করার পরও কাফিরদের পোশাক ছিল মুশরিকি চিন্তায় সিক্ত।

রাসুলুল্লাহ (স.) এবং সাহাবিগণ যে একটিমাত্র ডিজাইনের পোশাক পরতেন এমন নয়। হাদিস শাস্ত্র অধ্যয়ন করলে আমরা অনেক ধরনের পোশাকের নাম দেখতে পাই। যেমন কামিস (জামা), কাবা বা কোর্তা (কোট জাতীয় জামা), ইজার (সেলাইবিহীন লুঙ্গি). রিদা (চাদর), তুব্বান (হাফ প্যান্ট বা হাফ পায়জামা, জাঙ্গিয়া), জুব্বা, সারাবিল (পায়জামা, ফুলপ্যান্ট, সালোয়ার), খিমার (ওড়না), জেলবাব ইত্যাদি। রাসুল (স.) নিজেও যুদ্ধে, সফরে, অনুষ্ঠানে, ঈদগাহ, মেহমানদের সাথে সাক্ষাতের সময় সুবিধাজনক পোশাক পরিধান করেছেন।

তবে দৈনন্দিন জীবনে রাসুল (স.) প্রায় সময় ইজার (সেলাইবিহীন লুঙ্গি) এবং রিদা (চাদর) পরিধান করতেন। আবু বুরদাহ (রা.) বর্ণনা করেছেন, আয়েশা (রা.) একখানা চাদর ও মোটা কাপড়ের একটি ইজার নিয়ে আমাদের নিকট এলেন এবং বললেন, যখন নবী (স.) ওফাত যান, তখন এ দু’টি পোশাক তার পরিধানে ছিল। (সহি বুখারি)।

বিভিন্ন বর্ণনা থেকে এটা খুবই স্পষ্ট যে, রাসুলল্লাহ (স.) তত্কালীন আরব দেশের পোশাককে বাতিল না করে প্রথমত ইসলামী আকিদার আলোকে সংশোধন বা সংস্কার করেছেন। দ্বিতীয়ত. বৈসাদৃশ্য সৃষ্টির মৌলিক নীতির ভিত্তিতে বিশ্বব্যাপী সব সম্প্রদায় থেকে মুসলমানদের পোশাককে পৃথক করেছেন।

যে ব্যক্তি রাসুলকে মেনে চলল, সে মূলত আল্লাহরই আনুগত্য করল -নিসা : ৮০। তাই রাসুলুল্লাহর (স.) নির্দেশ অবশ্য পালনীয়। পরিভাষায় ওয়াজিব বা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা যাই বলা হোক না কেন, যে বিষয়ে রাসুলের (স.) সুস্পষ্ট নির্দেশ আছে, সেটি অমান্য করার কোনো সুযোগ নেই।

রাসুল (স.) কর্তৃক নির্দেশিত পোশাকের আবশ্যিক বিধান

১। কোনো মুসলিম পুরুষ রেশমী পোশাক পরিধান করতে পারবে না।

২। অন্য ধর্মীয় পোশাক পরিধান করা যাবে না।

৩। কাপড়ে কোনো প্রাণীর ছবি রাখা যাবে না।

৪। পোশাক টাইট, ফিট অথবা পাতলা হতে পারবে না।

৫। মহিলাদের পোশাক পা পর্যন্ত ঢাকা হবে।

৬। সর্বোপরি পুরুষ এবং মহিলার পোশাক পৃথক বৈশিষ্ট্যের হতে হবে।

৭। পোশাক এমন হবে না যে ইবাদতের সময় মনোযোগ আকর্ষণ করে।

৮। পুরুষের পোশাক পায়ের গিরার নিচে ঝুলানো যাবে না।

পুরুষদের পোশাক পায়ের গিরার নিচে ঝুলিয়ে পরার ক্ষেত্রে অহংকারকে অনেকে শর্ত হিসেবে মনে করেন। বলা হয়ে থাকে, অহংকার না থাকলে ঝুলিয়ে পরা যাবে। কিন্তু বহু হাদিস আছে, যেখানে অহংকারকে শর্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি।

তাই দেখা যাচ্ছে, একটিমাত্র ডিজাইনের পোশাক সবার জন্য হবে, এমনটি নয়। বরং বলা যায়, বিশ্বের সব প্রান্তের পোশাকই ইসলামী পোশাক, যদি তা ইসলামী আকিদার সাথে সাংঘর্ষিক না হয় পোশাকটি যদি কোরআন এবং সুন্নাহ বর্ণিত সীমা অতিক্রম না করে এবং পোশাক পরিধান করলে অন্য কোনো সম্প্রদায়ের সদস্য হিসেবে মনে না হয়। আমরা আমাদের পোশাক দিয়ে ইসলামী সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করতে না পারলে, আমাদের স্বকীয়তা রক্ষায় ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল হতে বাধ্য। অতএব আমাদের পোশাক অন্তত এতটুকু অবশ্যই হতে হবে, যেন আপনাকে-আমাকে দেখে অন্য সম্প্রদায়ের লোক মনে না হয়।

Source: mamunmck.wordpress.com

Friday, June 21, 2019

শিক্ষাপল্লীর সেবা নিন, ঘরে বসে বই কিনুন।


শিক্ষাপল্লীর সেবা নিন, ঘরে বসে বই কিনুন। এছাড়া www.ahsanpublication.com -এই ওয়েবসাইটের সাহায্যেও বই ক্রয় করতে পারেন। এখানে Contact পেজে যেয়ে যোগাযোগ করুন। এছাড়া www.rokomari.com থেকেও ইসলামী বই কিনতে পারেন। আল্লাহ আমাদের তৌফিক ও উত্তম হেদায়াত দান করুন, আমীন।


Saturday, June 8, 2019

কিছু ইসলামিক সাহায্যকারী প্রতিষ্ঠানের নাম ও ওয়েবসাইট এড্রেস


কিছু ইসলামিক সাহায্যকারী প্রতিষ্ঠানের নাম ও ওয়েবসাইট এড্রেস: 


General Enquiries
Call: +88029893458


Media Enquiries
Safiul Azam

safiul.azam@islamicrelief-bd.org

+880 1777773713

Skype: m.safiulazam
Bangladesh Country Office
Islamic Relief Bangladesh

House # 10, Road # 10, Block # K

Baridhara, Dhaka-1212

Tel: +880-29893458, 8819392
The International Office
Islamic Relief Worldwide

19 Rea Street South

Birmingham B5 6LB

Tel: 0121 605 5555

২) মুসলিম দাতব্য সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ ১০এ


কায়রো থেকে অন ইসলাম : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ ১০টি দাতব্য সংস্থার মধ্যে একটি নেতৃস্থানীয় মুসলিম দাতব্য সংস্থা স্বীকৃতি পেয়েছে। এর ফলে এটি দেশে শীর্ষ ৪ তারকার দাতব্য সংস্থার সুবিধাপ্রাপ্ত একটি হলোক। নর্থ আমেরিকা ইসলামিক সার্কেলের (আইসিএনএ) প্রেসিডেন্ট নায়েম বেগ এক বিবৃতিতে জানান, এটা সকল আমেরিকান মুসলিমের জন্যে গর্বের মুহূর্ত। তিনি ত্রাণ ও উন্নয়ন (এইচএইচআরডি) টীম সংক্রান্ত সাহায্যকারী হাতকে অভিনন্দন জানান।
আমরা সাহায্যকারীর হাতের অব্যাহত সফলতা এবং বিশ্বব্যাপী গরীব ও অতি দরিদ্রদের জন্যে ত্রাণ আনয়নের প্রচেষ্টা জোরদার করার প্রার্থনা করি। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয় এইচ এইচ আরডি বেসরকারি অবদানে ১০ শীর্ষ উচ্চ রেটেড দাতব্য সংস্থার মধ্যে স্বীকৃতি পেল। দেশের বৃহত্তম এবং অধিকতর মূল্যায়নকারী দাতব্য সংস্থা চ্যারিটি নেভিগেটর এই র‌্যাংকিং এর কথা ঘোষণা করে। পক্ষপাতদুষ্ট নয় এই প্রতিষ্ঠান আমেরিকার সর্ব পরিচিত প্রায় ৬ হাজার দাতব্য সংস্থা রেটির ব্যবস্থা নিরুপন করে এই সিদ্ধান্ত নেয়।
এইচ এইচ আরডি বর্তমানে আর্থিক কাজ সম্পাদনে ৬৮ দশমিক ৯৫ নম্বর, একাউন্টিস্টিবিলটি ও স্বচ্ছতায় ৭০ নম্বর এবং সর্বোপরি ৭০’র মধ্যে ৬৯ দশমিক ২৫ নম্বর পেয়ে ৬ষ্ঠ স্থান অধিকার করেছে। অর্থাৎ এর র‌্যাংক হচ্ছে ৬ষ্ঠ।  এনজিও হচ্ছে বিশ্বব্যাপী মানবীয় সংগঠন যারা বিশ্বব্যাপী বর্ণ, লিঙ্গ, জাতিগত, শ্রেণী এবং ধর্মীয় সব জরুরি এবং দুর্যোগমূলক পরিস্থিতি প্রশ্নে সাড়া দিয়ে থাকে। এইচ এইচ আরডি’র আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কসহ ক্ষুদ্র সম্প্রদায়ের সমর্থন গ্রুপ থেকে জাতীয় জোটে অংশীদারিত্ব রয়েছে। উত্তর আমেরিকান এবং বিশ্বব্যাপী এইচ এইচ আরডির ১৩টি অফিস রয়েছে এবং প্রায় ৩শ’ কর্মচারি রয়েছে। এর অফিস রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের জর্দান, আফ্রিকার কেনিয়া ও সোমালিয়া, দক্ষিণ এশিয়ার পাকিস্তান এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বার্মা এবং থাইল্যান্ডে।
এইচ এইচ আরডি’র সকল ত্রাণ কর্মসূচি হচ্ছে হাইতি, কেনিয়া, সোমালিয়া, ভারত, সিরিয়া, জর্দান, মিসর তিউনিসিয়া, পাকিস্তান, কাশ্মীর, বাংলাদেশ, বার্মা ও থাইল্যান্ড এবং ইন্দোনেশিয়ায় ৫৫টি দেশে মওসুমী এই সংস্থা কর্মসূচি, দুর্যোগ ত্রাণ, দারিদ্র্য দূরীকরণ, এতিমদের সহায়তা দান, স্বাস্থ্য সেবা সংগঠিত করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রে সংখ্যালঘু মুসলিমদের সংখ্যা হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ লাখ। চলতি মাসের গোড়ার দিকে ধর্ম ও ব্যক্তিগত জীবন সংক্রান্ত পিউফোরাম ‘বিশ্বের মুসলিমঃ ধর্ম রাজনীতি ও সমাজ’ শিরোনামে জরিপের বিষয়টি প্রকাশ করে। জরিপে দেখা যায় বিশ্বব্যাপী আমেরিকান মুসলিমদের অধিকাংশই হচ্ছে মধ্যমপন্থী।
এতে দেখা যায়, মার্কিন মুসলিমরা সাধারণত তাদের বিশ্বাসের প্রতি জোরালো প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে এবং আধুনিক সমাজে বসবাসরত ও ধর্মীয় ব্যাপারে দ্বন্দ্ব দেখতে চায় না। আগের গ্যালকা জরিপে দেখা যায়, আমেরিকান মুসলিমদের অধিকাংশই দেশের প্রতি আনুগত্যশীল এবং যুক্তরাষ্ট্রে তাদের ভবিষ্যৎ প্রশ্নে আশাবাদী।



Muslim Aid-UK, Bangladesh Country Office

CONTACT address: 
Muslim Aid-UK, Bangladesh Country Office.
House # 13, Road # 27, Block # J, Banani, Dhaka–1213, Bangladesh
Phone: +880 2 8836221, +880 2 8836421 |   Fax: +880 2 8821368
E-mail: info@muslimaid.org.bd



৪)  Muslim Global Relief | No.1 Muslim Charities List UK‎



৫)  Muslim Aid USA | Islamic Charity Organization

)  https://www.islamic-relief.org/

৭) www.ihh.org.tr/en

আইএইচএইচ-এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি আনদুল হাকিম মাহমুদ। 

একটা নিউজ দেখার জন্য লিংক দিলাম:

Turkey’s IHH supports 95,000 orphan children globally

৮) সাহায্য সংগ্রহের জন্য এই ব্লগটি ব্রাউজ করুন: